
বয়সের ভারে নুয়ে পড়লেও অন্যের জমিতে শ্রমিকের কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছেন ৬৬ বছর বয়সী নান্নু মিয়া। সরকারি ভাতার কার্ড নিতে দালালদের দেওয়ার মতো অগ্রিম ঘুষের টাকাও ছিল না তার কাছে।
আর এই সুযোগে রোকেয়া বেগম নামে এক প্রতারক দালাল নান্নু মিয়াকে বয়স্ক ভাতার কার্ড করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে জাতীয় পরিচয়পত্র ও ছবিসহ তার মোবাইল ব্যাংক এ্যাকাউন্ট খুলে দিতে ৬২০ টাকা হাতিয়ে নেন।
একইসঙ্গে শর্তজুড়ে দেন বয়স্ক ভাতার প্রথম ও দ্বিতীয় কিস্তির প্রায় ৫ হাজার থেকে ৬ হাজার টাকা পাবেন দালাল রোকেয়া, আর পরবর্তী ভাতার টাকাগুলো পাবেন দিনমজুর নান্নু মিয়া।
কিন্তু রোকেয়া বেগম সে কথাও রাখেননি। তিনি দিনমজুর নান্নু মিয়ার বয়স্ক ভাতার কার্ডের সরকারি ব্যাংক হিসেব নম্বরের জায়গায় নিজের মোবাইল নম্বর দিয়েছেন।
এতে গত এক বছর ধরে নান্নু মিয়া সরকারি ভাতার একটি টাকাও পাননি। দালাল রোকেয়া বেগম ধুনট উপজেলা সমাজসেবা অফিসের অসাধু কর্মকর্তা ও রাজনৈতিক নেতার যোগসাজশে দিনমজুর নান্নু মিয়ার সরকারি ভাতার প্রায় ৮ হাজার টাকাই আত্মসাৎ করেছেন।
ভুক্তভোগী নান্নু মিয়ার বাড়ি বগুড়া জেলার ধুনট উপজেলার গোসাইবাড়ী ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডের বাকশাপাড়া গ্রামে। তিনি ওই গ্রামের মৃত জয়নাল মণ্ডলের ছেলে। প্রতারক রোকেয়া বেগম একই গ্রামের আয়নাল হোসেনের স্ত্রী।
বৃহস্পতিবার সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ধুনট উপজেলা সমাজসেবা অফিসের সামনে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করেও ভাতা না পেয়ে অবশেষে ধুনট মডেল প্রেসক্লাবে এসে সাংবাদিকদের কাছে এসব তথ্য জানান ভুক্তভোগী দিনমজুর নান্নু মিয়া ও তার স্ত্রী আনোয়ারা বেগম।
তবে দিনমজুর নান্নু মিয়ার অভিযোগটি যাচাই করতে গিয়ে অনুসন্ধানে জানা গেছে, প্রতারক রোকেয়া বেগম ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের কতিপয় নেতার পরিচয় ব্যবহার করে এবং মহিলা আওয়ামী লীগ নেত্রী পরিচয় দিয়ে এসব গরীব দুস্থ মানুষদের, বয়স্ক, বিধবা, প্রতিবন্ধী ভাতাসহ সরকারি বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা পাইয়ে দেওয়ার কথা বলে দীর্ঘদিন ধরে প্রতারণা করে আসছেন।
কেউ যদি নগদ টাকা দিতে না পারেন, সেক্ষেত্রে সেই সব ভাতা ভোগীদের সরকারি কার্ডে নিজের মোবাইল নম্বর বসিয়ে দিয়ে গরীবের জন্য বরাদ্দকৃত সরকারি টাকা হাতিয়ে নেন তিনি।
এছাড়াও প্রতারক রোকেয়া বেগমের বিরুদ্ধে আরও অনেক ব্যক্তির সরকারি ভাতার কার্ড নিজের জিম্মায় রেখে এবং নিজের মোবাইল এ্যাকাউন্টে সরকারি টাকা হাতিয়ে নেয়ারও অভিযোগ রয়েছে।
এমন ঘটনা শুধু নান্নু মিয়ার সঙ্গেই হয়নি। তার মতো আরও অনেক অসহায়, দুস্থ মানুষদেরকেই এসব প্রতারণার ফাঁদে পড়তে হচ্ছে। তবে সরকারি ভাতার সুবিধা নিতে দালাল, কতিপয় রাজনৈতিক নেতা, জনপ্রতিনিধি ও সংশ্লিষ্ট অফিসের অসাধু কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করেই সরকারি ভাতা পেতে হচ্ছে গরীব অসহায় এসব মানুষদের।
এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে প্রতারক রোকেয়া বেগম নিজেকে ধুনট সদর ইউনিয়ন মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক দাবি করে বলেন, নান্নুর মিয়ার কাছে কোন টাকা পয়সা ছিল না। কিন্তু কার্ড করতে অফিস খরচ বাবদ অনেক টাকাই খরচ হয়। তাই নিজের টাকা খরচ করে তাকে কার্ড করে দিয়েছিলাম। এছাড়া তার কোন মোবাইল না থাকায় নিজের ফোন নম্বর দিয়েছি।
দিনমজুর নান্নু মিয়া কেন তার নামে সরকারি বরাদ্দকৃত একটি টাকাও পেলেন না এ প্রশ্নের জবাবে রোকেয়া বেগম বলেন, আমার ফোন নম্বরে মাত্র ৬ হাজার টাকা পেয়েছি। প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী নান্নু মিয়ার কাছে আরও টাকা পাওনা আছে।
তবে এসব বিষয়ে ধুনট উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল কাফী বলেন, অফিসের কাজে ঢাকা অবস্থান করায় এবিষয়ে কিছুই বলতে পারছি না। তবে সরকারি ভাতার টাকা আত্মসাৎ করা হলে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এব্যাপারে ধুনট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সঞ্জয় কুমার মহন্ত বলেন, সরকারি ভাতার টাকা কেউ আত্মসাৎ করলে অবশ্যই তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। একাত্তর